স্ক্রিনটাইম বাড়ায় বাচ্চাদের কী কী সমস্যা হচ্ছে
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
২৮-১০-২০২৪ ০৩:২১:০১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৮-১০-২০২৪ ০৪:৪৭:০৭ অপরাহ্ন
প্রতীকী ছবি
গবেষণা বলছে, মোবাইল ও অন্যান্য গ্যাজেটের প্রতি আসক্তির কারণে বাচ্চাদের প্রতিদিনের স্ক্রিনটাইম যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে শিশু বয়সে স্থুলতার আশঙ্কা, মোটর ও কগনিটিভ স্কিল কমে যাওয়ার আশঙ্কা।
বিনোদনের জন্য হোক কিংবা পড়াশোনার খাতিরে, বাচ্চাদের স্ক্রিনটাইম অর্থাৎ মোবাইল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটে কাটানো সময়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে বই কমছে না। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭০ সাল নাগাদ যেখানে গোটা বিশ্বে বাচ্চাদের গড়ে ৪ বছর বয়স না হওয়া অবধি তারা ডিজিটাল বস্তুর নাগাল পেত না, সেখানে ২০২৪-এ সেই বয়স এসে ঠেকেছে ৪ মাসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু বয়স থেকে এই মোবাইল নির্ভরতা, বাচ্চাদের শারীরিক সুস্থতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে।
বাচ্চাদের স্ক্রিনটাইম বাড়ার ফলে অল্প বয়সে চোখের সমস্যা, মনোযোগের সমস্যা তো দেখা দিচ্ছেই, পাশাপাশি বাড়ছে চাইল্ড ওবেসিটি বা স্থুলতার আশঙ্কা, কমছে মোটর স্কিল, অর্থাৎ নির্দিষ্ট কাজের জন্য মাংসপেশী প্রক্ষালনের ক্ষমতা। হাতের সামনে থাকা মোবাইল বা গ্যাজেটটিতেই বাচ্চাদের সমস্ত বিনোদন একত্রিত থাকার ফলে তাদের বাইরে গিয়ে খেলাধুলো করার দরকার পড়ছে না। অথচ, চিকিৎসকরা বলছেন, একটা বয়স পর্যন্ত বাইরের পরিবেশে খেলাধুলো করা বাচ্চাদের শরীরের সঠিক বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা বলছে, টিভি বা মোবাইলের প্রতি আসক্তি তাদের কগনিটিভ ক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে। কোনও নির্দেশের উত্তরে তাদের কাজ করার ক্ষমতা বা এক্সিকিউটিভ ফাংশনিং হ্রাস পাচ্ছে। এমনকি সেনসরি-মোটর ডেভেলপমেন্ট বা আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে তাদের মানসিক ও শারীরিক যোগাযোগও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তারা ভাষা শিখছে দেরিতে, কারণ আশেপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় কমে আসছে, যোগাযোগের পুরো মাধ্যমটাই হয়ে উঠছে যন্ত্রনির্ভর। এর ফলে পরবর্তী জীবনে পড়াশোনা বা অন্য কাজে তাদের বেশ বেগ পেতে হতে পারে। শুধু তাই নয়, স্থুলতা বা অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে ছোট বয়স থেকেই উদ্বেগ, অবসাদ, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদিও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
বাধা পাচ্ছে পুষ্টিও?
গ্যাজেটনির্ভর বিনোদনের সঙ্গে বাচ্চাদের পুষ্টির সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যে বাচ্চাদের খাওয়ার সময় টিভি বা মোবাইল দেখার অভ্যেস রয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই খাবারের সঙ্গে খুব অস্বাস্থ্যকর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছে। খাওয়ার সময় সমস্ত মনোযোগ টিভি বা মোবাইলে থাকার কারণে তারা খাবারের স্বাদ, গন্ধ, টেক্সচার কিছুই ভাল মতো বুঝে উঠতে পারছে না। ফলে তাদের পুষ্টি যথাযথ হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বড় হয়ে এদের ‘পিকি ইটার’ হওয়ার সম্ভাবনাও খুব বেশি। সঙ্গে রয়েছে নানা অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিজ্ঞাপন। সেসব দেখে বাচ্চাদের ওই খাবারগুলোর প্রতি প্রলুব্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রয়েছে সমাধান
ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতুলতা বাচ্চাদের যে এই যুগে অনেক টেক স্যাভি করে তুলতে সাহায্য করছে, সেটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু ওই যে, সব কিছুরই রাশ টানা প্রয়োজন। অন্তত যে বয়সে ওরা নিজেদের ভাল-মন্দের কিছুই বোঝে না, সেখানে অভিভাবকদের আরও কঠোর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই রয়েছে।
১. বাচ্চাকে একটি নির্দিষ্ট সময় ছাড়া মোবাইল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের সংস্পর্শে আসতে দেবেন না। কত ক্ষণ সে ওটা ব্যবহার করতে পারবে, সেই সময়ও বেঁধে দিন।
২. পড়াশোনা, টিউশন বা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি-র যতই চাপ থাকুক না কেন, ওকে বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে বাইরে গিয়ে খেলাধুলো করতে উৎসাহ দিন। প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা বাচ্চাকে বাইরে গিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে দিন, খেলতে দিন।
৩. সপ্তাহে একদিন এমন কোনও কাজে ওকে ব্যস্ত রাখুন, যাতে খানিক শারীরিক কসরত করতে হয়।
৪. টিউশন ক্লাস বাড়ি থেকে কাছাকাছি হলে চেষ্টা করুন সেই রাস্তা হেঁটে যাতায়াত করতে। ওই সময়টা ওর সঙ্গে নানা বিষয়ে গল্প করুন।
৫. নিজের অফিসের বা অন্যান্য কাজ, যা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেগুলো সময় থাকতে সেরে ফেলুন। আপনারা নিজেদের বিনোদনের জন্য টিভি বা মোবাইলের উপর নির্ভরশীল হলে বাচ্চাও সেটাই অনুকরণ করবে। তাই ফাঁকা সময়ে ওকে সঙ্গে নিয়ে নানা মজাদার অ্যাক্টিভিটি করুন। ঘরের কাজেও ওকে সঙ্গে নিন।
৬. সর্বোপরি, সন্তানের সঙ্গে মানসিক এনগেজমেন্ট বাড়ান। সন্তানকে সময় দিলে নিজে থেকেই ডিজিটাল দুনিয়ার প্রতি তার নির্ভরতা কমে আসবে। সূত্র : সানন্দা
বাংলা স্কুপ/ডেস্ক/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স